My Tips 24

অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার কারণে কী সমস্যা হতে পারে।

অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার কারণে কী সমস্যা হতে পারে।

লবণ ছাড়া খাবার অসম্ভব ব্যাপার। খাবারে লবণ বেশি দিলেও যেমন খাওয়া যায় না, কম বা না দিলেও খাবারযোগ্য থাকে না। লবণের ভালো মন্দ দুইটি দিকই রয়েছে।

লবণ এক ধরনের স্ট্রেস ফুড। এটি সিমপ্যাথেটিক নার্ভ সিস্টেমকে উদ্দীপিত করে যা স্ট্রোক, হার্ট এ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়ায়। ঘাম বেশি হয়ে লবণ শরীরে পানি ধরে রাখে। তাই লবণ বেশি খেলে হাই ব্লাড প্রেসারের আশঙ্কা থাকে। খাবারে বাড়তি লবণ খাওয়ার ফলে পাকস্থলীর আস্তরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ধীরে ধীরে পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টি হয়। লবণ হাড় থেকে ক্যালসিয়াম শুষে নেয়, শরীর থেকে বর্জ্য বের হবার কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। এর জন্য ইউরিক এসিড বৃদ্ধি, বাতের সমস্যা দেখা যায়।

অনেকে অভ্যাস আছে খাবার খেতে বসলে আলাদা পাত্রে কাঁচা লবণ নেয়। অনেকে অতিরিক্ত এ কাঁচা লবণ কে ভেজে পাকা করে খান। দুটোই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কারণ লবণ ভাজলে পানি শুকিয়ে গেলেও সোডিয়াম ক্লোরাইড ঠিক থাকে। রান্নায় অতিরিক্ত লবণ বাড়িয়ে দেওয়াও সমাধান নয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দৈনিক ৪-৫ গ্রামের বেশি লবণ খায় তাদের এই সমস্যা বেশি হয়। তাই প্রতি ১.৫-২ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া যাবে না। রান্নার সময় যতটা প্রয়োজন ততটা লবণ ব্যবহার করতে হবে। যেসব খাবারে লবণ বেশি থাকে যেমন- আচার, প্যাকেটজাত স্যুপ, পনীরের বার্গার বা স্যান্ডউইচ, আলুচিপস, পপকর্ন এসব খাওয়া কমাতে হবে। ডিজেনারেটিভ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে লবণ খাওয়া একেবারেই বাদ দিতে হবে।

রান্নার সময় প্রয়োজন মতো লবণ দিন। কিন্তু কাঁচা লবণ যতটা পারবেন, কম খাবেন। কারণ প্রচুর মাত্রায় কাঁচা লবণ খেলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বহু গুণে বৃদ্ধি পায়।

গত কয়েক বছরে আমাদের দেশের পাশাপাশি সারা বিশ্বেই নন-কমিউনিকেবল ডিজিজে আক্রান্তের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো বেড়ে গেছে, আর তার পেছনে অন্যতম কারণ হল অতিরিক্ত মাত্রায় লবণ খাওয়া। এমনকী বাচ্চাদের মধ্যেও অসুস্থতা বাড়ছে, বেশি মাত্রায় লবণ খাওয়ার কারণে। তাই এই বিষয়টির দিকে যদি এখন থেকেই খেয়াল রাখা না যায়, তাহলে কিন্তু বিপদ!

চলুন জেনে নেওয়া যাক অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার কারণে কী কী শারীরিক সমস্যা হতে পারে।

অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার কারণে কী সমস্যা হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের অতিরিক্ত লবণ খেতে নিষেধ করা হয়। কারণ এটি রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি ফেইলুরের মতো সমস্যা হতে পারে।

.হৃদরোগ

বেশি মাত্রায় লবণ শরীরে প্রবেশ করলে হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিওর সহ একাধিক হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে হার্ট ফেইলিওর হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। তাই হার্টকে যদি বেশি দিন সুস্থ রাখতে চান, তাহলে লবণ খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে।

ক্যান্সার

বেশি লবণ খেলে ক্যান্সারের মতো মারণ রোগেও আক্রান্ত হতে পারেন। একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়েছে যে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে লবণ খেলে পাকস্থলির ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বৃদ্ধি পায়।

কিডনি নষ্ট হতে শুরু করে

শরীরে ইলোকট্রোলাইটসের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে লবণ কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। কিন্তু তাই বলে বেশি মাত্রায় লবণ খাওয়া একেবারেই চলবে না। কারণ যত বেশি করে লবণ আমাদের শরীরে প্রবেশ করবে, তত কিডনির কর্মক্ষমতা কমে যেতে শুরু করবে। সেই সঙ্গে বাড়বে রক্তচাপও, যা যে কোনও মানুষকে ধীরে ধীরে শেষ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

পাকস্থলির আলসার

শরীরে বেশি মাত্রায় লবণের প্রবেশ ঘটলে পাকস্থলির আবরণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়, ফলে পাকস্থলি আলসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে শরীরে জলের ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কারণে নানা রকমের জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়।

অস্টিওপোরোসিস

শরীরে লবণের মাত্রা যত বাড়বে, তত পানির পিপাসা পাবে। আর পানি বেশি করে খেলে প্রস্রাবও বেশি করে হবে। ফলে শরীর থেকে ক্যালসিয়াম বেরিয়ে যেতে শুরু করবে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে। আর এমনটা হলেই ধীরে ধীরে হাড় দুর্বল হয়ে গিয়ে দেখা দেবে অস্টিওপোরোসিসের মতো রোগ।

মস্তিষ্কের ক্ষমতা কমবে

বেশি মাত্রায় লবণ খেলে ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি কমে যেতে শুরু করবে। সেই সঙ্গে ব্রেন ফাংশন ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং কমবে মনোযোগও। আর এই লক্ষণগুলি দেখা গেলে দৈনন্দিন জীবন যে কতটা দুর্বিষহ হয়ে উঠবে, তা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না।

৮.বেশি পানি পিপাসা

বেশি লবণ খেলে পিপাসা বাড়ে। কারণ এটি দেহের কোষে তরলের ভারসাম্য রক্ষায় সমস্যা করে। এতে বেশি পিপাসা পায় এবং পানি পানের ইচ্ছে হয়। আর পানি যেমন শরীরের জন্য উপকারি তেমনি অতিরিক্ত পানি পান কিডনিতে চাপ তৈরি করে।

৯.হাড় দুর্বল করে

বেশি মাত্রায় লবণ খেলে হাড়ের ক্যালসিয়াম প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। এতে হাড় দুর্বল এবং ভঙ্গুর হয়ে যায়। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি মাসিক বন্ধের পর, যখন নারীদের হাড়ের ক্যালসিয়াম কমে যায়, তখন বেশি লবণ খাওয়া পরিহার করা প্রয়োজন। এ ছাড়া অতিরিক্ত লবণ খাওয়া কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে।

পরামর্শ

খাবারে বাড়তি লবণ নেওয়া বন্ধ করা উচিত। একেবারেই লবণ খাবেন না- এমন মনোভাব এড়িয়ে চলতে হবে। দুই পন্থাই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। লবণ খান, কিন্তু বেশি মাত্রায় খাবেন না। তাহলেই দেখবেন সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে পারছেন

Exit mobile version