কীভাবে দরখাস্ত লখিতে হয় – চাকরির জন্য দরখাস্ত লেখার নিয়ম

কীভাবে দরখাস্ত লিখতে হয়

কাজের প্রয়োজনে অনেক সময় আমাদের দরখাস্ত লিখতে হয় হোক সেটা ইংরেজি অথবা বাংলা। আবেদনপত্র যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমে।  মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে বসবাস করতে মানুষে মানুষে যোগাযোগ অত্যাবশকীয়। যোগাযোগ ছাড়া যেন সব কিছু অর্থহীন। স্কুল, কলেজে এমনকি চাকরির জন্য আমাদের দরখাস্ত লিখতে হয়। পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক,ব্যবসায়িক সকল ক্ষেত্রে পত্রের গুরুত্ব  অপরিসীম। শুধু ব্যক্তিগত প্রয়োজনে নয় আমরা অফিস আদালতেও পত্র লিখে থাকি যেটাকে আবেদন পত্র বা দরখাস্ত বলে।যদিও বিজ্ঞানের যুগে ই-মেইল,মেসেজ এগুলার ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে, তারপরও দরখাস্ত যোগাযোগের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমে।  প্রতিনিয়ত আমরা দরখাস্ত লিখে থাকি। কিন্তু অনেক সময় আমরা দরখাস্ত বা আবেদনপত্র সঠিকভাবে লিখতে পারিনা। সঠিক নিয়মের অভাবে আমাদের দরখাস্তটি গ্রহনযোগ্য হয়না, বাতিল হয়ে যাই। দরখাস্ত একটি অফিসিয়াল পত্র, যার কারণে সঠিক নিয়ম অনুসরণ না করলে আমরা যে উদ্দেশ্যে দরখাস্ত লিখি সেটা অর্জন করতে পারিনা।অনেক সময় দরখাস্ত লিখার নিয়ম না জানার কারণে অভিজ্ঞ মানুষের নিকট থেকে সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে।বিশেষ করে চাকরি প্রার্থীদের সঠিক নিয়মে দরখাস্ত না লিখতে পারলে সমস্যায় পড়তে হয়। অনেক মানুষের দেখা যাই চক্ষুলজ্জায় মানুষের থেকে এ বিষয়ে পরামর্শ নিতে লজ্জা পায়। ফলে সুনির্দিষ্ট কোন বিশয়ে দরখাস্ত লিখতে সমস্যার সম্মুখীন হয়। দরখাস্ত লেখার অনেক ফরমেট রয়েছে। মূলত কাজের ধরন অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন দরখাস্ত হয়ে থাকে। সঠিক নিয়ম আয়ত্ত করতে পারলে যেকোনো দরখাস্ত লেখা সম্ভব। আপনাদের সাথে আজ আলোচনা করব কীভাবে সঠিকভাবে দরখাস্ত লেখা যাই। আশা করি নিচের নিয়ম গুলোকে সঠিকভাবে অনুসরণ করলে সঠিকভাবে দরখাস্ত লিখতে আপনাদের কোন সমস্যা হবে না।

দরখাস্ত লেখার নিয়মাবলি : দরখাস্ত লেখার কিছু নিয়ম আছে,যেগুলো ছাড়া সঠিকভাবে দরখাস্ত ল্রখা যাই না। যেকোন ধরনের দরখাস্ত হোক না কেন নিচের নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হবে

  • প্রাপক( যার কাছে আবেদন করছেন তার নাম,পদবি ও ঠিকানা)
  • আবেদনের বিষয়।
  • সম্ভাষণ / জনাব / স্যার / ম্যাডাম ইত্যাদি।
  • আবেদনের বিষয়টির গঠনমূলক বর্ণনা।
  • আবেদনকারীর নাম, পদবি, ঠিকানা।
  • আবেদনের তারিখ।

কিছু কিছু ভুল বা ত্রুটির কারণে দরখাস্ত বাতিল হয়ে যাই।তাই দরখাস্ত লেখার সময় আমাদের যথেষ্ট সর্তক থাকতে হবে। শন্দ চয়ন ও দরখাস্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।নিচে কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো সেগুলোর কারণে আপনার গুরুত্বপূর্ণ আবেদনপত্র বাতিল হয়ে যেতে পারে।

  • নির্দেশমত ফটো না দিলে
  • নির্দিষ্ট জায়গায় স্বাক্ষর না দিলে
  • ঠিকমতো পেশাগত বা শিক্ষাগত যোগ্যতা না দিলে
  • আবেদনের যথাযথ ফি না জমা দিলে
  • অভিজ্ঞতা চাওয়া হলে না দিলে
  • দরখাস্তের নির্ধারিত ফরম্যাট না অনুসরণ না করলে
  • বয়স ঠিকমতো না দিলে
  • দরখাস্তের নির্দিষ্ট ফরম পূরণ না করলে
  • প্রামাণপত্রাদি চাইলে তা সঠিকভাবে উপস্থাপন না করলে
  • সংরক্ষিত পদের জন্য অসংরক্ষিত কেউ এবং অসংরক্ষিত পদের জন্য সংরক্ষিত কেই আবেদন করলে
  • যোগ্যতা, কাস্ট সার্টিফিকেট যে তারিখের ভেতর পূরণ করার কথা সেয় তারিখে পূরণ না করলে

কর্তৃপক্ষের বিবেচনার ওপর নির্ভর করবে কোন কোন ক্ষেত্রে :

  • একই ব্যক্তি একাধিক দরখাস্ত করলে বা নিষধ থাকার সত্ত্বেও আবেদন করলে।
  • অভাররাইট বা কাটাকাটি থাকলে।
  • সাদা-কালো ছবির পরিবর্তে রঙিন বা রঙিন ছবির পরিবর্তে সাদা-কালো ছবি দিলে এবং ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড,  ধরন নির্দেশমত না দিলে।
  • সার্টিফিকেট নিজের নাম,মা- বাবার নামের সাথে দরখাস্তে দেওয়া নামের মিল না থাকলে।
  • সার্টিফিকেটর বয়্রসের সাথে দরখাস্তে দেওয়া বয়সের মিল না থাকলে।
  • নিজের নাম লেখা,ঠিকানা লেখা ও ডাকটিকেট সাঁটা খাম চাওয়ার স্বত্তেও না দিলে।
  • কোন কিছু সুতা দিয়ে গাঁথার বদলে পিন বা স্টেপল করে দিলে।
  • দরখাস্ত লিখে বা অনলাইন প্রিন্টআউট সাধারণ ডাকটিকিটে প্রেরণ এর কথা বলা থাকলেও কুরিয়ার / রেজিস্টার্ড/ স্পীড পোস্ট করলে।
  • ফরম কালো কালিতে পূরণ এর কথা বলা থাকলেও নীল কালি বা অন্য কালি ব্যবহার করলে।
  • দরখাস্ত লেখার সময় শব্দের মধ্যে যথাযথ স্পেস ব্যবহার না করলে

ভুলত্রুটি এড়িয়ে কীভাবে শুদ্ধভাবে দরখাস্ত লেখা যায় :

সুদ্ধভাবে দরখাস্ত লিখলে আবেদনটি গ্রহণযোগ্য হয়তাই শতর্কতার সাথে শুদ্ধভাবে দরখাস্ত লিখতে হবেনিচে কিছু বিষয় দেওয়া হলো, যেগুলো দরখাস্ত লেখার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে

  • আবেদন করার আগে অবশ্যই বিজ্ঞপ্তি ভালোভাবে পড়ে নিতে হবে, দরকার হিয় অভিজ্ঞ কারও সাহায্য নিতে হবে
  • বানান সঠিক রাখার জন্য ডিকশনারি নিয়ে বসা উচিত দরখাস্ত লেখার সময়,এছাড়া স্কেল, কাগজ, কলম,ইরেজার,খাম ইত্যাদি যা যা দরকার সেগুলো যথাযথ ব্যবস্থা করা
  • মাধ্যমিকের এডমিড কার্ড থেকে শুরু করে সকল  সার্টিফিকেট ,ছবি,কাগজপত্র এবং সেসবের জেরক্স( প্রতয়িত চাইলে প্রতয়িতসঠিকভাবে জমা দেওয়া
  • ওয়েবসাইটে দরখাস্ত পূরণের নমুনা দেখানো থাকে, সেগুলো ধাপে ধাপে দেখে নেওয়া উচিত
  • দরখাস্ত লেখা থেকে পাঠানোর আগ পর্যন্ত যে তথ্যগুলো প্রয়োজন সেগুলো একটা তালিকা কিরে নিলে পরে ভুল হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে।
  • ওভার রাইটিং বা কাটাকাটি এড়াতে আগে একটা খসড়া করে নেওয়া যেতে পারে।
  •  সময় আছে ভেবে দরখাস্ত না লিখে ফেলে রাখলে শেষ টাইমে ভুল হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। তাই সময় থাকতে দরখাস্ত লেখা উচিত।
  • দরখাস্তে অবশ্যই সঠিক তথ্য দিতে হবে।
  • দরখাস্ত পাঠানোর সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন নির্ধারিত সময়ে পৌছাতে পারে।

চাকরির দরখাস্ত লেখার নিয়ম: চাকরির আবেদনপত্রের মাধ্যম্যে চাকরি প্রত্যাশীর ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায়। আমরা অনেকেই বিশেষ করে নতুন গ্রাজুয়েশন শেষ করেছে সঠিকভাবে দরখাস্ত লিখতে পারিনা। বর্তমান আধুনিক যুগে দরখাস্ত হলো পরীক্ষকের আকৃষ্ট করার হাতিয়ার। চাকরির দরখাস্ত লিখতে যেগুলো বিবেচনা করতে হবে সেগুলো হলো:

  • যে প্রতিষ্ঠানের জন্য আবেদন লিখবেন সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী, কাজ,ধরন,চাকরী প্রত্যাশী ও প্রতযোগীদের ধরণ সম্পর্কে তথ্য জানা উচিত।অবশ্যিই চাকরির আবেদনপত্র লেখার আগে বিজ্ঞপ্তি ভালোভাবে পড়ে নিবেন, দরখাস্তে বিজ্ঞপ্তির টার্মগুলো ব্যবহারের চেষ্টা করবেন।
  • কোন পজিশনের জন্য এপ্লাই করছেন সেটা বিষ্যে উল্লেখ করা।
  • নিজের সম্পর্কে যেমন বানিয়ে বলার কিছু নাই তেমন নিজের দূর্বলতা প্রকাশেরও দরকার নাই।
  • আপনি যে কাজের জন্য দরখাস্ত লিখছেন আপনি কেন এই কাজের জন্যে যোগ্য সে বিষয়ে সংক্ষেপে কারণ বিশ্লেষণ।
  • আপনি যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেতে চান,চাকরি পেলে আপনি ও-ই প্রতিষ্ঠানে কেমন সুযোগ -সুবিধা দিতে পারবেন তা উল্লেখ করা, আপনি কি সত্যিই চাকরিটা করতে আগ্রহী এবং আপনার দ্বারা কাজটি সম্ভব  সে বিষয় পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা।
  • পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য সুন্দর ও সাবলীল বাক্য দিয়ে দরখাস্ত শুরু করুন।
  • অনেকেই দরখাস্তে লিখেন চাকরি টা পেলে আপনি ধন্য।  এধরণের কিছু লেখা উচিত না কারণ পাঠক আপনার থেকে এটা জানতে চাইনা,আপনি যোগ্যতা জানতে চাই, সে বিষয়টা কার্যকরভাবে তুলে ধরুন।
  •  কপি পেস্ট থেকে বিরত থাকুন।

একটি চাকুরিতে সিভি যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি আবেদনপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ। একটি চাকুরিতে সিভি যেমন আপনাকে উপস্থাপন করে সঠিক দরখাস্ত আপনাকে করে তোলে পারফেক্ট। একটি সিভি থেকে প্রতিষ্ঠান চাকরি প্রার্থী সম্পর্কে জানতে পারে কিন্তু দরখাস্ত থেকে আরও ভালো ধারণা নেয়। আমরা যারা সদ্য গ্রাজুয়েশন করেছি অথবা নতুন চাকরি প্রার্থী, তাদের জন্য কীভাবে দরখাস্ত লিখতে হয় এটা যানা খুব গুরুত্বপূর্ণ। উপরের নিয়মগুলো পড়লে দরখাস্ত লেখার নিয়ম সম্পর্কে জানা যাবে বলে আশা করা যাই।

কম্পিউটারের গতি বাড়ানোর উপায়

চাকরির ছারকুলার

সর্বাধিক জনপ্রিয়